
ক্যাসিনো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলার একটি নির্দিষ্ট স্থান যাকে বাংলায় জুয়ার আড্ডা বা আসর বলা যায়। কিন্তু সেটা হয় সুবিশাল পরিসরে। সাধারণত ক্যাসিনো এমনভাবে বানানো হয় যে এর সাথে কিংবা পাশাপাশি হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, আনন্দভ্রমণ জাহাজ এবং অন্যান্য পর্যটন আকর্ষণ থাকে৷ কিছু কিছু ক্যাসিনোয় সরাসরি বিনোদন প্রদান যেমন স্ট্যান্ড আপ কমেডি, কনসার্ট, খেলাধুলা ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকে।
উৎপত্তি ও ব্যবহার
ক্যাসিনো ইতালীয় ভাষার শব্দ যার মূল ক্যাসা অর্থ ঘর। ক্যাসিনো বলতে ছোট ভিলা, গ্রীষ্মকালীন ঘর কিংবা সামাজিক ক্লাবকে বোঝানো হতো। ১৯ শতকের দিকে ক্যাসিনো বলতে এমনসব ভবনকে বোঝানো হতো যেখানে আনন্দদায়ক কাজকর্ম হতো যেমন নগরের সামাজিক অনুষ্ঠান যেখানে নাচ, গান, জুয়া ও ক্রীড়ার ব্যবস্থা থাকতো। আধুনিক দিনে ইতালিতে বিভিন্ন অর্থে তারা ক্যাসিনো ব্যবহার করে। যেমন পতিতালয় (ক্যাসা চুইসাও বলে যার অর্থ বন্ধ বাড়ি) ও শব্দপূর্ণ পরিবেশ। তারা জুয়ার আসর বোঝাতে ভিন্ন উচ্চারণে ক্যাসিনো বলে।
সব ক্যাসিনোই কিন্তু জুয়ার খেলার কাজে ব্যবহার করা হয় না। ক্যালিফোর্নিয়ার শান্তা কাতালিনা দ্বীপের কাতালিনা ক্যাসিনোতে কখনো জুয়া খেলা হয়নি কারণ যখন এটা নির্মাণ করা হয় সে সময়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় জুয়া খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো। কোপেনহেগেন ক্যাসিনো একটি থিয়েটার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৮৪৮ সালের আন্দোলনের সময় এখনকার গণজমায়েতের কারণে এটা পরিচিত। এই আন্দোলন ডেনমার্ককে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত করে। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত এটা ডেনিশ থিয়েটার নামে সুপরিচিত ছিল। ফিনল্যান্ডের হাংকো ক্যাসিনোতেও কখনো জুয়া খেলা হয়নি। ১৯ শতকের শেষের দিকে এটা স্প্যা রিজোর্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে এটা রেস্তোরাঁ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জার্মান এবং স্প্যানিশ ভাষায় ক্যাসিনো বা কাসিনো দ্বারা অফিসার মেস বোঝানো হয়।
জুয়া বাড়ির ইতিহাস
জুয়ার উৎস বা শুরুটা একদমই অজানা। ইতিহাসের প্রায় সব সমাজেই কোন না কোন রূপে জুয়ার প্রচলন ছিলো। প্রাচীন গ্রীক-রোমান থেকে নেপোলিয়নের ফ্রান্স থেকে বর্তমান বাংলাদেশ সব খানেই জুয়ার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
সর্বপ্রথম জানা ক্যাসিনো ইউরোপের ভেনিস, ইতালিতে ১৬৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৭৪ সালে এটাকে বন্ধ করে দেয়া হয়।
আমেরিকায় স্যালুন নামে প্রথম জুয়াবাড়ি নির্মিত হয়। চার প্রধান শহর নিউ অরেলিন্স, সেন্ট লুইস, শিকাগো এবং স্যানফ্রান্সিস্কোয় স্যালুন নির্মিত হয়। এসব স্যালুনে আগতরা পান করতো, আড্ডা দিতো এবং প্রায়শই জুয়া খেলতো। ১৯৩১ সালে নেভাদায় জুয়া খেলাকে বৈধ করা হলে সেখানে প্রথম বৈধ আমেরিকান ক্যাসিনো নির্মিত হয়। ১৯৭৬ সালে নিউ জার্সি আটলান্টিক শহরে জুয়া খেলা অনুমোদন করে। এটা বর্তমানে আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহৎ জুয়াড়ি শহর।
ক্যাসিনোয় জুয়াখেলা
বিশ্বব্যাপী সর্বনিম্ন জুয়াখেলার বয়স ১৬ থেকে ২১ এর মধ্যে।
খরিদ্দারেরা ক্যাসিনো গেমস দ্বারা জুয়া খেলে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা বা দক্ষতারও প্রয়োজন হয়। অধিকাংশ গেমস গাণিতিকভাবে এমনভাবে বিন্যাস করা থাকে যে প্রায়শই খেলোয়ারদের চেয়ে বাড়িগুলো সুবিধা পেয়ে থাকে। এই সুবিধাকে হাউজ এজ বলা হয়ে থাকে। পোকারের মতো খেলাগুলো যেখানে একজন খেলোয়াড় অপর খেলোয়ারের সাথে খেলে সেখানে বাড়িগুলো রেক নামে কমিশন নিয়ে থাকে।
স্লট মেশিন বা ভিডিও লটারি মেশিন ক্যাসিনোর অন্যতম জনপ্রিয় জুয়া খেলা।২০১১ মোতাবেক প্রতিবেদনে জানা যায় আধুনিক স্লট মেশিন খুবই আকর্ষণীয়।
মার্কেট
বিশ্বব্যাপী ক্যাসিনো মার্কেট থেকে US$১ বিলিয়ন এরও বেশী আয় হয়।
অঞ্চল অনুসারে
Rank | Region | Revenue (US$M) | ||
---|---|---|---|---|
2009 | 2010 Projected | 2011 Projected | ||
মোট | 100,481 | 109,354 | 120,380 | |
1 | যুক্তরাষ্ট্র | 57,240 | 56,500 | 58,030 |
2 | এশিয়া Pacific | 21,845 | 32,305 | 41,259 |
3 | ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা | 17,259 | 16,186 | 16,452 |
4 | কানাডা | 3,712 | 3,835 | 4,045 |
5 | লাতিন আমেরিকা | 425 | 528 | 594 |
কোম্পানি অনুসারে
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুসারে ২০১১ সালে বিশ্বের সব থেকে বড় ক্যাসিনো পরিচালনা কোম্পানিগুলোর আয় প্রায় US$৫৫ বিলিয়ন। সোসাইদেদে।দে তুরিজমো এ দিভারসোয়েস দে ম্যাক্যাও এই খাতে এগিয়ে থাকা কোম্পানি। তারা ২০১১ সালে $৯.৭ বিলিয়ন আয় করে। এর পরে ছিলো লাস ভেগাস স্যান্ডসের আয় $৭.৪ বিলিয়ন। তৃতীয় বৃহত্তম ক্যাসিনো পরিচালনা কোম্পানি সিজারস এন্টারটেইনমেন্ট কর্পোরেশন যাদের আয় US$৬.২ বিলিয়ন।
উল্লেখযোগ্য স্থান
পৃথিবী ব্যাপী অনেক স্থানেই ক্যাসিনো আছে। তার মধ্যে অল্পকিছু স্থান জুয়াখেলার জন্যে সুপরিচিত হয়ে উঠেছে।
মন্টে কার্লো, মোনাকো
বিখ্যাত মন্টে কার্লো ক্যাসিনো মোনাকোর মন্টে কার্লো শহরে অবস্থিত। অনেক বইয়ে মন্টে কার্লো ক্যাসিনোর উল্লেখ আছে। বেন মেজরিকের বুস্টিং ভেগাসে একদল ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অভ টেকনোলজির ছাত্র $১ মিলিয়ন যেতে। বইটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখিত। জেমস বন্ড উপন্যাস ও চলচ্চিত্রে মন্টে কার্লো ক্যাসিনোর উল্লেখ আছে। দ্যা ম্যান হু ব্রোক দ্যা ব্যাংক এট মন্টে কার্লো চলচ্চিত্রে এই একই নামে একটা গান আছে।
ক্যাম্পিওনে দ'ইতালিয়া
ক্যাসিনো দি ক্যাম্পিয়নে সুইজারল্যান্ডের ক্যান্টন অভ টিকিনোর মধ্যে অবস্থিত ইতালিয় ছিটমহল ক্যাম্পিয়নে দ'ইতালিয়ায় অবস্থিত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বিদেশি কূটনীতিকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্যে ১৯১৭ সালে ক্যাসিনোটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ক্যাসিনোটির মালিক ইতালিয় সরকার এবং পরিচালনায় দায়িত্বে আছে মিউনিসিপ্যালিটি। ইতালি এবং সুইজারল্যান্ডে জুয়ার আইন কিছুটা শিথিল হওয়ায় মন্টে কার্লোর পরে এটা দ্বিতীয় জনপ্রিয় জুয়ার আড্ডা।২০০৭ সালের সম্প্রসারণের পরে এটা ইউরোপের সর্ববৃহৎ ক্যাসিনোয় পরিণত হয়।
ম্যাকাও
ম্যাকাও হচ্ছে সাবেক পর্তুগিজ উপনিবেশ যা বর্তমানে চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল। এটা পর্তুগিজ আমলে শুরু হয়েছিলো। ভেনেটিয়ান ম্যাকাও বর্তমানে বিশ্বের বড় ক্যাসিনোতে পরিনত হয়েছে।
জার্মানী
জার্মানিতে নির্দিষ্ট লাইসেন্সের অধীনে মেশিন ভিত্তিক জুয়া খেলার ক্যাসিনো, রেস্তোরাঁ, বার চালানোর অনুমতি রয়েছে।
এস্ট্রইল ক্যাসিনো, ক্যাসকেইস, পর্তুগাল
এস্ট্রইল ক্যাসিনো পর্তুগালের ক্যাসকেইসে অবস্থিত।
এস্ট্রইল ক্যাসিনো পর্তুগালের ক্যাসকেইসে অবস্থিত।
0 Comments